নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় র৵াবের তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার, অবসরে পাঠানোসহ গা বাঁচানো যে কটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেটাও বিলম্বে এবং নাগরিক সমাজের সমালোচনা ও জনমতের চাপের মুখে৷ এত বড় ঘটনায় সরকার স্বপ্রণোদিত হয়ে তাৎক্ষণিক উচ্চপর্যায়ের কোনো তদন্ত কমিটিও গঠন করেনি৷ পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে সরকার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে৷ এমনকি র৵াবের যে তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যও হাইকোর্টকে নির্দেশ দিতে হয়েছে৷ যদিও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি৷
এ ঘটনায় সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও অস্বস্তিতে আছেন৷ ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় কোনো কোনো নেতা ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন৷ তবে কেউ-ই এ বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে নাম প্রকাশ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনার জন্য দায়িত্বশীল কোনো নেতা উদ্যোগীও হননি৷ সভা-সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও সবাই সতর্ক৷ বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবাই চেয়ে আছেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে৷ একইভাবে সরকার ও প্রশাসনও কার্যত একমুখাপেক্ষী হয়ে আছেন বলে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন সচিবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে৷
তবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নারায়ণগঞ্জের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়ে আসছেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকার বা আওয়ামী লীগ নয়, দেশের রাজনীতির স্বার্থেই নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার সত্য উদ্ঘাটন হওয়া জরুরি। দল হিসেবে আওয়ামী লীগও এ ব্যাপারে সোচ্চার ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন তিনি। তাঁর মতে, প্রশাসনসহ সর্বস্তরে জবাবদিহির সংস্কৃতি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে এ ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
কয়েক বছর ধরেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপহরণ-গুম-খুনের ঘটনা চলে আসছে৷ এসব বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনসহ নাগরিক সমাজ দাবি জানিয়ে এলেও সরকার এসব বন্ধ করতে পারেনি৷ সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের ঘটনা দেশব্যাপী আতঙ্ক ও আলোড়ন সৃষ্টি করে৷ যা সরকারের জন্য বড় একটা ধাক্কা বলে মনে করছেন প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অভিজ্ঞ একাধিক সচিব বলেন, সুশাসনের অভাব হলে বা আইনের শাসন ভেঙে পড়লে উন্নয়ন ভেসে যাবে, যেমন গিয়েছিল জাতীয় নির্বাচনপূর্ব চারটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে যখন যে নির্বাচনই হোক না কেন ফল ওই রকমই হতে বাধ্য।
তাঁরা কেন এসব ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে পারেন না—জানতে চাইলে ওই সচিবেরা বলেন, রাজনীতির মতো প্রশাসনেও এককেন্দ্রিকতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের রাজনীতিকীকরণ ও দলীয়করণের দীর্ঘ ধারাবাহিকতার ফল এটি। এই কেন্দ্রিকতা কেউ ভাঙার চেষ্টা করলে এখনকার বাস্তবতায় তিনিই ছিটকে পড়বেন। এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য একটা সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পর গুম-খুনের ঘটনায় রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগও কিছু দিগ্ভ্রান্ত৷ দলের উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলেন, এ ঘটনায় সরকারের একটি বাহিনীর হাতে দলের লোক খুন হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দলের স্থানীয় নেতৃত্ব এর সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ আছে। সাধারণ মানুষ এসব অভিযোগ সত্য বলে মনে করে। ফলে এসব ঘটনায় দলের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীর কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ কতটা আছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে ।
আগামীকাল দলের বৈঠক: এ পরিস্থিতিতে কাল বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক বসছে। বৈঠকের আলোচনায় নারায়ণগঞ্জের ঘটনা থাকবে। সেখান থেকে নেতারা অপহরণ-গুম-খুনের ঘটনাবলি, তার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় নেতাদের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে দলের বক্তব্য ও অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট করে জানার চেষ্টা করবেন বলে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জািনয়েছেন।
0 comments:
Post a Comment
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.