বুধবার পর্দা উঠতে যাচ্ছে ৬৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের। ১৪-২৫ মে, এই ১২
দিনের জন্য উৎসবের বর্ণচ্ছটায় জেগে উঠতে যাচ্ছে ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগর
তীরবর্তী শহর কান। মর্যাদাপূর্ণ এ উৎসবে যোগ দিতে পৃথিবীর নানা প্রান্ত
থেকে চলচ্চিত্রের রথী-মহারথীরা এরই মধ্যে পাড়ি জমাতে শুরু করেছেন ফ্রান্সের
এই শহরে।
জুরি বোর্ড
উৎসবের শীর্ষ পুরস্কার
‘পাম দ’র’ জয়ের জন্য এবার ১৮টি চলচ্চিত্র মূল প্রতিযোগিতায় শামিল হচ্ছে।
কান চলচ্চিত্র উৎসবের ইতিহাসে এই পুরস্কার বিজয়ী একমাত্র নারী, জেইন
ক্যাম্পিয়নের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে এবারের মূল জুরি বোর্ড। নিউজিল্যান্ডের
এই চলচ্চিত্র পরিচালক ১৯৯৩ সালে তাঁর ‘দ্যা পিয়ানো’ ছবির জন্য পাম দ’র
জেতেন এবারের জুরি বোর্ডের ৯ জনের ৫ জন নারী
‘আন-সার্টেইন রিগার্ড’
জুরি বোর্ডে, সদস্য আছেন ৫ জন বিভাগটিতে প্রতিযোগিতা করছে আরও ২০টি
চলচ্চিত্র। এছাড়া ‘ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট’, ‘ক্রিটিকস উইক’ এবং অন্যান্য
বিভাগে প্রতিযোগিতায় থাকছে আরও ডজনখানেক চলচ্চিত্র।
এবারের যতো ছবিকানাডিয়ান পরিচালক ডেভিড কোনেনবার্গ
বলেন, “কান উন্মত্ত, তীব্র এবং মজার।” উৎসবে নিয়মিত এই পরিচালকের ‘ম্যাপস
টু দ্যা স্টারস’ চলচ্চিত্রটি এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। চলচ্চিত্রের
কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন টোয়াইলাইটখ্যাত অভিনেতা রবার্ট প্যাটিসন।
পাম
দ’র বিজয়ী ব্রিটিশ পরিচালক মাইক লেই বলেন, “কান উৎসবে চলচ্চিত্রের
প্রদর্শনী করাটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা।” লে এবার উৎসবে আসছেন ব্রিটিশ
চিত্রকর জে.এম.ডব্লিউ. টার্নার এর জীবনের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত ‘মিস্টার
টার্নার’ ছবিটি নিয়ে।
তিনি বলেন, “আমি উৎসবটা বরাবরই খুব উপভোগ করি।
প্রতিযোগিতায় এবার পঞ্চমবারের মতো অংশ নিচ্ছি। তাছাড়া জুরি বোর্ডের সদস্য
হিসেবে থাকতে পেরে আমি খুশি যে, আমার কিছু করণীয় আছে।”
তুরস্কের
পরিচালক নূরী সেলান-এর ছবি এর আগেও কানে নানা পুরস্কার পেয়েছে তিনি এবার
প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন ‘উইন্টার স্লিপ’ চলচ্চিত্রটি নিয়ে।
তাঁর
প্রযোজক যেনেপ ওযবাতুর জানান, “দেশকে এবং দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে
সারাবিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য এটা একটা বড় সুযোগ। কারণ এখানে এই
শিল্পটির হৃদয় স্পন্দিত হয়।”
এবারের কান উৎসবে আগত মার্কিন পরিচালক
বেনেট মিলার-এর ‘ফক্সক্যাচার’ চলচ্চিত্রটি তৈরি হয়েছে অলিম্পিক স্বর্ণপদক
বিজয়ী রেসলার, ‘ডেভ শুলৎজ’-এর হত্যাকান্ডের কাহিনী নিয়ে। ‘দ্যা আর্টিস্ট’
খ্যাত ফরাসি পরিচালক মিশেল হাযানিভিশুস এর চলচ্চিত্র ‘দ্যা সার্চ’ নির্মিত
হয়েছে যুদ্ধবিদ্ধস্ত চেচনিয়াকে নিয়ে।
মার্কিন অভিনেতা-পরিচালক টমি লি
জোনস-এর এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন তাঁর ‘দ্যা হোমসম্যান’ ছবিটি
নিয়ে। জোনস এবং মেরিল স্ট্রিপ অভিনীত এই ছবিটি সীমান্তের ঘটনা নিয়ে
নির্মিত।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে
রয়েছে ফরাসি পরিচালক জঁ লুক গদার পরিচালিত ‘গুডবাই ল্যাঙ্গয়েজ’ এবং কানাডার
এটম ইগোয়েন পরিচালিত ‘দ্যা ক্যাপটিভ’।
কান উৎসবে, অ্যানিমেশন ‘হাও
টু ট্রেইন ইয়োর ড্রাগন টু’-এর আন্তর্জাতিক অভিষেক ঘটবে। এটি ২০১০ সালে
মুক্তিপ্রাপ্ত ব্লকবাস্টার অ্যানিমেশন ‘হাও টু ট্রেইন ইয়োর ড্রাগন’-এর
সিকুয়্যাল। চলচ্চিত্রটি ১৯৭৪ সালের ভৌতিক চলচ্চিত্র ‘দ্যা টেক্সাস চেইন ’স
ম্যাসাকার’-এর আদলে নির্মিত।
উৎসবে কানাডা থেকে ২৫ বছর বয়সী জেভিয়ার
ডোলান-এর ‘মমি’সহ মোট ৩টি ছবি অংশ নিচ্ছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (২টি)
চাইতে বেশি। ক্রোনেনবার্গ একে মজা করে, দুই দেশের হকি খেলার চিরশত্রুতার
ক্ষেত্রে ‘ছোট একটা জয়’ বলে উল্লেখ করেন।
‘সাবেকী ইউরোপ’, ‘যুক্তরাষ্ট্র’-এর চলচ্চিত্রের আধিক্য:হলিউড
রিপোর্টারের বার্লিন ব্যুরো প্রধান স্কট রক্সবরো বলেন, “আমার কাছে এ বছরের
আকর্ষণীয় বিষয় এটাই যে, উৎসবটা অনেক বেশি ‘সাবেকী ইউরোপ’ আর
‘যুক্তরাষ্ট্র’ নির্ভর। এখানে কিছু এশীয় আর কিছু স্ক্যান্ডিনেভিয়ান
চলচ্চিত্র আছে, নেই কোনো জার্মান চলচ্চিত্র। আর পূর্ব ইউরোপ আর রাশিয়ার
চলচ্চিত্রও খুব একটা নেই।”
“তাই শুধু মুখগুলোই নয় বরং এলাকাগুলোও
পরিচিত। অনেকগুলো ফরাসি চলচ্চিত্র, আর যথেষ্ট পরিমাণে আমেরিকান চলচ্চিত্র।
আর অন্যান্য দেশগুলোও পূর্ব-পরিচিত।”
কিন্তু উৎসব উৎসবই, আর সেখানে সব স্বাদেরই কিছু না কিছু থাকে।
বিতর্ক
উৎসবের
উদ্বোধনী চলচ্চিত্র, নিকোল কিডম্যান অভিনীত ‘গ্রেস অফ মোনাকো’ নিয়ে
ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে
মার্কিন অভিনেত্রী এবং পরবর্তীতে রাজকুমারী ‘গ্রেস কেলি’র ঘটনাবহুল জীবন
নিয়ে। গ্রেস কেলি ১৯৫৬ সালে অভিনয় ছেড়ে মোনাকোর রাজকুমার তৃতীয় রেইনিয়ারের
সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৮২ সালে তিনি পূর্ব কান-এর অদূরবর্তী এক
পাহাড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।
বেশ কয়েক মাস ধরেই চলচ্চিত্রটির ফরাসি
পরিচালক অলিভিয়ের দাহান এবং প্রযোজক হার্ভে ওয়েনস্টেইন (মার্কিন বিপণন
স্বত্বে মালিক)-এর বিরুদ্ধে চলচ্চিত্রটিকে বিতর্কিত করতে ইন্ধন দেওয়ার
ব্যাপারে অভিযোগ ওঠে।
এ মাসেই মোনাকোর রাজ পরিবার থেকে চলচ্চিত্রটিকে
‘একটি প্রহসন’ বলে অভিযুক্ত করা হয়। কেলির সন্তান ক্যারোলিন এবং স্টেফানি,
এর ট্রেইলার দেখে একে সম্পূর্ণ কাল্পনিক বলে অভিহিত করেন।
বিতর্কটি
নিয়ে উৎসবের পরিচালক থিয়েরি ফ্রিমক্স-এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ফরাসি
আইনের দোহাই দিয়ে বলেন, “আইনানুযায়ী চলচ্চিত্রের পূর্ণাংগ চিত্রায়ন
সম্পূর্ণই পরিচালকের এখতিয়ারে।”
ফ্রিমক্স বলেন, “আমরা এখন ফ্রান্সে আছি। আর কান-এ, পরিচালকের সংস্করণটাই আসল সংস্করণ।”
'বিতর্ক'
ব্যবসার জন্য ভালো। ১৯৫৩ সাল থেকেই, বিতর্ক কানের সাথে জড়িয়ে আছে। সে বছর
অষ্টাদশী ব্রিজিত বার্দো হলিউড লেজেন্ড কার্ক ডগলাসের সঙ্গে বিকিনি পরা
অবস্থায় সমুদ্রতীরে ফটোসেশন করে গণমাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন
‘অনন্য' কান উতসব
১৯৯৬
সালে ‘ক্র্যাশ’ চলচ্চিত্রের জন্য জুরি পুরস্কার পাওয়া পরিচালক
ক্রোনেনবার্গ বলেন, কান "ঠিক সেই জিনিস, যেটা আমার মতো স্বাধীন পরিচালকেরা
চায়।” তিনি মন্তব্য করেন কানে তিনি কমপক্ষে ৫০০ সাক্ষাৎকারের মুখোমুখি
হবেন। এতে তাঁর নতুন চলচ্চিত্রের প্রচারণা একটা নতুন মাত্রা পাবে। যেটা
অন্য কোথাও সম্ভব নয়।
“স্বাধীন পরিচালক হিসেবে আমরা পৃথিবীর সকল
জায়গায় আমাদের ছবি পৌঁছে দেওয়ার সামর্থ্য রাখি না। এজন্য চলচ্চিত্রের
প্রচারণার জন্য এটা দারুণ একটা জায়গা।”
কান উৎসবে ‘প্রাইড’ চলচ্চিত্রটি নিয়ে আসা ব্রিটিশ চিত্রনাট্যকার স্টিফেন বেরেসফোর্ড বলেন, “এর একটা জাদুকরী আহ্বান আছে।”
0 comments:
Post a Comment
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.