
বাংলাদেশ
থেকে আসার আগে কখনোই ভেবে দেখিনি দেশকে কত ভালবাসি । আসার সময় একটা পতাকাও
নিয়ে এসেছিলাম সবার অগোচরে। এমন কাউকেই পাইনি যে কিনা দেশের কথা ভাবে না।
ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেজড়িত থাকার কারণে বিদেশে এসেও
তার থেকে দূরে থাকতে পারলাম না । এখানকার বন্ধু-বান্ধব নিয়ে সংগঠনও করে
ফেললাম । অনেক পিকনিক, পহেলা বৈশাখের আয়োজন, খেলাধূলার আয়োজনও হলো কিন্তু
সবার মাথায় বড় একটা কিছু করার আগ্রহ দেখতে পেলাম । সবাই মিলে ঠিক করলাম
একটা বড় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করব। সবার প্র্র্রিয় ব্যান্ড এলআরবি। বিস্তর
আলোচনা শেষে সব দায়িত্ব আমার মাথায় উঠল। তারিখও ঠিক করলাম ২৫ আগষ্ট ২০১২।
তখনো জানি না কি ভূত মাথায় নিলাম । ২৩ আগষ্ট ২০১২, এলআরবি এসেছিল আমার
শহরে, আমারই আমন্ত্রণে । সত্যি বলতে ভয় পেয়েছিলাম তারা জানি কেমন হয়,
আমাদের পছন্দ করে কি না? নানা অজানা আশঙ্কা ভর করেছিল এলআরবিকে নিয়ে । শুধু
আমার না, গ্রুপের সবারই ভয় ছিল । কথা হতো শুধু এলআরবি'র ম্যানেজার শামীম
ভাইয়ের সঙ্গে, বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল আসার আগে । উনার সঙ্গে
কথা বলার সময় কি বলেছি সেদিনও মনে নাই, আজও মনে করতে পারছি না । মনে আছে,
কুমিল্লায় যেদিন প্রথম এলআরবি এসেছিল সেদিন মাঠে ঢুকতে, একটুখানি সামনে
যেতে কি কষ্টই না করতে হয়েছিল । আমার জামা ছিঁড়ে গিয়েছিল, শখের জুতাও
হারিয়ে ফেলেছিলাম । দিন কীভাবে পাল্টায়! ২৩ আগষ্ট ২০১২ এলআরবি মিলানের
MALPENSA AIRPORT এ সন্ধ্যা ছয়টায় নামার কথা। আমি ধারণা করেছিলাম, উনাদের
বের হতে বুঝি ঘণ্টা খানেক লাগবে, তাই সাড়ে পাঁচটায় রওনা দিলাম । ওইদিন
সত্যিসত্যি মাথায় বজ্রপাত হলো। নাহিদ, আমি শামীম। তুমি কোথায় ??? সময়
সন্ধ্যা ৬.১০। আমি তখন মাঝ রাস্তায় । বোঝেন বন্ধুরা, তখন আমার মনের অবস্থা!
যাক সেসব কথা। মানুষ শুধু শিল্পী হলেই বড় হয় না, এলআরবি'র প্রতিটা সদস্যের
মনও অনেক বড়। কারো নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই না, প্রতিটি মানুষই
আত্মার সঙ্গে মিশে গেছে । উনাদের চলে যাবার দিন যেভাবে কেঁদেছি আমি এখন
পর্যন্ত কখনো এভাবে কাঁদিনি । সেই দিনগুলোর কথা আজও আমাদের ঘরোয়া আড্ডায়
উঠে আসে। পুরো এলআরবি টিমের সঙ্গেই দেশ নিয়ে, দেশের মানুষ নিয়ে প্রচুর
আড্ডা হয়েছিল । প্রিয় ঢাকা শহরের কোন কোন জায়গার খাবার বিখ্যাত, আমাদের
ছোটবেলার কথা, আরও নানা খুনসুঁটি চলতে লাগল পুরো টিমের সঙ্গে ।এলআরবি'র
আয়োজন কেমন হয় তা সবার জানা। তারপরও বলব, এককথায় অসাধারণ ছিল অনুষ্ঠান। এক
চাচাকেও দেখলাম হেড়ে গলায় সবার সাথে গান গাচ্ছে আবার চোখেও পানি। বুঝলাম না
সেটা কি আনন্দের না কষ্টের! চাচাকে আজও জিজ্ঞাসা করা হয়নি সেই চোখের পানির
কথা। কিছু রহস্য না হয় রহস্য হিসাবেই থাকুক। অনুষ্ঠান নিয়ে অনেক ঝামেলার
পরও অনুষ্ঠান সুন্দর হয়েছিল সবার পরিশ্রম ও সহযোগিতার ফলে। দেশ থেকে অনেক
দূরে থাকলেও আমরা প্রবাসীরা দেশকে নিয়ে প্রচুর ভাবি । সবার প্রত্যাশা দেশ
এগিয়ে যাবে। সমস্যা থাকবেই আর তার সমাধান আমরাই করব। রক্ত দিয়ে যে দেশ
পেয়েছি তার উন্নয়নে সবার সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রিয় বাংলাদেশ তুমি
এগিয়ে যাও,শত কষ্টের মাঝেও তোমার সঙ্গে আছি তোমায় ভালবাসি ।
0 comments:
Post a Comment
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.