মাঝ
মাঠে নেইমারের কাছে থেকে বল দখল নিতে লাফিয়ে উঠেছিলেন হুয়ান ক্যামিলো
জুনিগা। কলম্বিয়ার এই ডিফেন্ডারের হাঁটুর আঘাতে ৮৮ মিনিটে স্ট্রেচারে মাঠ
ছাড়তে হয় নেইমারকে। সেখান থেকে সোজা ফোর্তালেজা হাসপাতালে। ব্রাজিলিয়ান
ফরোয়ার্ডের বিশ্বকাপ মিশন আকস্মিকভাবেই শেষ! যাঁকে ঘিরে ব্রাজিলের ষষ্ঠ
বিশ্বকাপ শিরোপার স্বপ্ন, যাঁকে কেন্দ্র করে কোচ লুইস ফেলিপে স্কলারির
রণকৌশল—সেই নেইমার এভাবে ছিটকে পড়বেন, মানতেই পারছেন না ব্রাজিলিয়ানরা। এক
যুগ পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দের পরিবর্তে গোটা ব্রাজিলে এখন
শোকের মাতম। একই সঙ্গে ক্ষোভে-রাগে ফুঁসছেন ব্রাজিলের সমর্থকেরা।ব্রাজিলের
অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমের অভিন্ন শিরোনাম—‘নেইমারের বিশ্বকাপ শেষ’। দেশটির
অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ‘ও গ্লোবো’র অনলাইন সংস্করণের শিরোনাম—
‘মেরুদণ্ডের অস্থিসন্ধি ভেঙে নেইমারের বিশ্বকাপ শেষ’। সাও পাওলো থেকে
প্রকাশিত ‘এস্তাদাও’র শিরোনামও প্রায় একই। ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থী
ফাবিয়ান রুইজ দুঃখ ভারাক্রান্ত নেইমারের এই অবস্থায়, ‘এটা ভয়ংকর খবর।
সবচেয়ে বাজে খবর। নেইমার আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামনের ম্যাচে
দলের অন্য খেলোয়াড়দের অনেক লড়াই করতে হবে। জার্মানির বিপক্ষে জেতা খুব কঠিন
হয়ে যাবে।’ ম্যাচের পর নেইমারকে ফোর্তালেজার যে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে তার
পাশে জনতার ভিড় জমে যায়। সবাই স্লোগান তোলেন—‘ফোর্সা নেইমার’ বা ‘শক্ত হও
নেইমার।’ এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও উঠেছে ঝড়। অনেক ব্রাজিলিয়ান
জুনিগার শাস্তি দাবি করেছেন ফিফার কাছে। তাদের দাবি, উরুগুয়ের লুইস
সুয়ারেজকে যেভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে জুনিগাকেও শাস্তি দেওয়া হোক।
এক ব্রাজিলিয়ান প্রাবন্ধিক জুনিগার ফাউলকে ‘হিংস্র আক্রমণ’ হিসেবে অভিহিত
করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফাব্রিসিও তাভারেজ তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন,
‘নেইমারের বিশ্বকাপ শেষ। কারণ সে কলম্বিয়ান খেলোয়াড়ের কাপুরুষোচিত ফাউলের
শিকার।’ সাও
পাওলোর একটি পানশালায় বসে খেলা দেখছিলেন ২৭ বছর বয়সী মনিকা ফেরেইরা। এক
যুগ পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দে উদ্বেলিত ছিলেন তিনি। কিন্তু
যখন শুনলেন নেইমারের বিশ্বকাপ শেষ—সেই আনন্দ পরিণত হলো বিষাদে। তিনি
জানালেন, ‘ও আমাদের সেরা খেলোয়াড়। তাঁকে আমরা ভালোবাসি কারণ, সে ব্রাজিলের
জার্সিতে কঠোর পরিশ্রম করে।’ কোনো কোনো ব্রাজিলিয়ান তো বিশ্বকাপ শিরোপার
আশাই ছেড়ে দিয়েছেন। ৩৩ বছর বয়সী এদোয়ার্দো গোমেজ ম্যাচের পর বিষণ্ন মনে
বান্ধবীকে নিয়ে বসেছিলেন। ম্লান বদনে বললেন, ‘সে আমাদের সেরা খেলোয়াড়। মনে
হয় না নেইমারকে ছাড়া বিশ্বকাপ জিততে পারব।’ রয়টার্স, ও গ্লোবো, এস্তাদাও।
0 comments:
Post a Comment